Saturday, March 16, 2013

দুই মেয়াদী শাসন ব্যবস্থা


সত্য কথা বলতে কি, পৃথিবীর সকল রাজনৈতিক দল দোষ-গুণের সমন্বয়। দেশে যেমন 'লীগের
বিরুদ্ধাভাজন বহু লোকের সমাবেশ আছে, তেমনি বিএনপির বিরুদ্ধেও ঢের অভিযোগ আছে। দেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে বিরোধীদল বিএনপি বাউন্স ব্যাক করে ক্ষমতায় এসে দেশের সার্বিক অবস্থার আলাউদ্দিনের আশ্বর্য প্রদীপ করবে এটাও অভিজ্ঞতার নিরিখে যেমন সত্য নয়, তেমনি বাস্তবতার আলোকেও সম্ভবপর নয়। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষ দেশের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে মুক্তি পেতে চায়, দেখতে চায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যেখানে তাদের সুখ-শান্তির জন্য অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সন্ধান মিলবে। এটাই রাজনীতি, এটাই জনকল্যাণ।এ জন্যই আমাদের সময় এসেছে আমাদের পদ্ধতিগত সরকার নিয়ে চিন্তা-ভাবনার।

আধুনিক গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি শাসিত (Presidential) সরকার ও সংসদীয় শাসিত (Parliamentary) সরকার নামক দু'টি ভিন্ন প্রথা বা পদ্ধতি রয়েছে এবং এগুলির অনুশীলন পৃথিবীতে প্রচলন আছে। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার হিসাবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রাষ্ট্র ও কার্যনির্বাহী শাখার (Executive Branch) উভয়েরই প্রধান, পক্ষান্তরে বাংলাদেশে সংসদীয় শাসিত সরকার হিসাবে প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন রাষ্ট্রের অনুষ্ঠানিক প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন সরকারের প্রধান ও প্রকৃত ক্ষমতাধিকারী। সংসদ (Parliament) যতদিন প্রধানমন্ত্রীর নীতিমালায় সমর্থন দিবে, ততদিন প্রধানমন্ত্রীর স্থায়িত্বকাল হবে, কিন্তু তা একটি সাধারণ নির্বাচন (General Election) ব্যতিরেকে পাঁচ বছরের অধিক হবে না। নির্ধারিত সময়সীমার মাঝে সাধারণ নির্বাচন যে কোন সময় ঘটতে পারে।

আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন(১৭৮৯-১৭৯৭) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দুই-মেয়াদীকাল দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং তাঁকে আবার দায়িত্ব পালন করার জন্য জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। তিনি ইচ্ছা করলে তা করতে পারতেন। কারণ জনগণ তাঁকে ভালবাসতো এবং তাঁর মিলিটারী তাঁর প্রতি আনুগত্য ছিল। এমন কি কর্নেল লুইস নিকোলা সুপারিশ করলেন যে, "সেনাবাহিনী জর্জ ওয়াশিংটনকে রাজা করে এক রাজতন্ত্র স্থাপন করেছে।" প্রতি উত্তরে জর্জ ওয়াশিংটন বলেছিলেন, "He read the idea with abhorrence and ordered Nicola to banish these thoughts from your mind" অর্থাৎ"তিনি ঘৃণার সাথে ধারণাটি পড়েছিলেন এবং মন থেকে ঐ ধারণাগুলি নির্বাসিত করতে নিকোলাকে আদেশ দিয়েছিলেন। ঐ দূরবর্তী যুগে ওয়াশিংটন হৃদয়াঙ্গম করেছিলেন রাজতন্ত্র দেশ ও জাতির জন্য ভাল ধারণা নয়। রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তিনি এই দুই মেয়াদীকাল সম্পর্কে দৃঢ় প্রত্যয়ের দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মানুষ ছিলেন।
আমেরিকার ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডেলানো রুজভেল্ট (১৯৩৩-১৯৪৫) ১২ বছরের অধিক সময় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনিই ছিলেন আমেরিকার একমাত্র চতুর্থ মেয়াদীর দীর্ঘ সময়ের প্রেসিডেন্ট১৯৪৫ সালে তিনি যখন মৃত্যবরণ করেন, তিনি ছিলেন চতুর্থ মেয়াদীর ৮৩ দিনের প্রেসিডেন্ট।

রুজভেল্টের মৃত্যুর পর, ভাইস-প্রেসিডেন্ট হারী এস. ট্রুম্যান আমেরিকার ৩৩তম প্রেসিডেন্ট (১৯৪৫-১৯৫৩) হিসাবে উন্নীত হন। ১৯৫১ সালে ২২তম সংশোধনে (Amendment) আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসাবে দুই চার-বছর শাসনতান্ত্রিক মেয়াদী শাসন ব্যবস্থা অনুমোদিত (Ratified) হয়।

উন্নত দেশগুলি দুই  চার-বছর শাসনতান্রিক মেয়াদী শাসন ব্যবস্থা অবলম্বন করতে পারে, পক্ষান্তরে উন্নতশীল দেশগুলি দুই পাঁচ-বছর শাসনতান্ত্রিক মেয়াদী শাসন ব্যবস্থা প্রচলন করতে পারে, হোক না তা রাষ্ট্রপতি বা সংসদ শাসিত সরকার।

জীবন, স্বাধীনতা ও অনন্ত সুখ অন্বেষায় জনগণের অবিচ্ছেদ্য অধিকার আছে। তাই যদি সত্য হয়, তারা কেন জীবনভিত্তিক (Life-term) প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী পদে অলংকৃত হতে পারেন না? এটা রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, পরিবার রাজনীতি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলির কু-মতলব প্রতিরোধ করণার্থে নতুন নেতৃত্বের সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রচিলত হয়েছে। যদি প্রতিরোধ না করা হয়, এগুলি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ঐক্য ধ্বংস সাধন করতে পারে। এর উদাহরণ আজ বিশ্বময়। সুতরাং দেশ পরিচালনার জন্য দুই-মেয়াদী শাসন ব্যবস্থা হচ্ছে যথার্থ উত্তর এবং এটা পরীক্ষিত ওয়েল-ওয়্ল্ড (Well-Oiled) মেশিন।

যদি প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র পরিচালনায় সফল না হন, তবে জনগণের অধিকার আছে তাকে দ্বিতীয় মেয়াদীতে পদচ্যুত করার। এতএব দুই-মেয়াদী শাসন ব্যবস্থা "জনগণের, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য" নিশ্চিত করে সরকারে নেতৃত্বের পরিবর্তন। প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী উভয়কে স্মরণ রাখা উচিৎ তারা জনগণের সেবক, প্রভু নন।

আইন প্রণেতারা (Legislators) তাঁদের নিজেদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করেন। তারা ব্যয় হ্রাস করণার্থে স্টাফ বা অন্যান্য উপকরণাদির ব্যয়-ভার কাটেন, কিন্তু তাদের বেতন ঠিকই থাকে বা বৃদ্ধি হয়। যদি তারা অফিসে জীবনভিত্তিতে কাটান, এটা তাদের একনায়কতন্ত্র পথে পরিচলিত করতে পারে।তাদের অনেকেরই শাসনতন্ত্রে উল্লেখিত জনগণের প্রথম এবং সর্বপ্রথম কল্যাণের চেয়ে নিজ স্বার্থপরতায় ব্যাতিব্যস্ত থাকেন। ফলস্বরূপ: দেশ ও জনগণের বৃহত্তম কল্যাণের স্বার্থে প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীর মত সকল নির্বাচিত সদস্য/সদস্যাদের দুই-মেয়াদী শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হওয়া আশু প্রয়োজন

No comments:

Post a Comment